গ্রন্থ সমালোচনা লেখার কৌশল

গ্রন্থ সমালোচনা লেখার কৌশল
Admin

গ্রন্থ সমালোচনা লেখার কৌশল


চাকরির লিখিত পরীক্ষা এখন সব নিয়োগের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এখানে বাংলা অংশে গ্রন্থ-সমালোচনা লিখতে হয়। এই অংশে ভালো নম্বর পেতে গ্রন্থ-সমালোচনা কীভাবে লিখবেন তা জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তারিক মনজুর

গ্রন্থ সমালোচনা লেখার কৌশল
গ্রন্থ সমালোচনা লেখার কৌশল



৩৫তম বিসিএস থেকে বাংলা লিখিত অংশে ‘গ্রন্থ-সমালোচনা’ যুক্ত করা হয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তরে কোনো একটি গ্রন্থ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে হয়। এ জন্য নির্ধারিত নম্বর ১৫। এটি কীভাবে উত্তর করতে হবে, তা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। আলোচনা শুরু করার আগে দেখে নেওয়া যাক, গ্রন্থ–সমালোচনা থেকে এর আগে কী কী প্রশ্ন এসেছে:

৩৫তম বিসিএস: সম্প্রতি প্রকাশিত ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি গ্রন্থের সমালোচনা লিখুন।


৩৬তম বিসিএস: বাঙালির ইতিহাস কিংবা লোকঐতিহ্যনির্ভর একটি গ্রন্থের সমালোচনা লিখুন।

৩৭তম বিসিএস: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক কোনো উপন্যাসের সমালোচনা লিখুন।

৩৮তম বিসিএস: ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অথবা ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থের গ্রন্থ-সমালোচনা লিখুন।

৪০তম বিসিএস: বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যভিত্তিক যেকোনো গ্রন্থের একটি সমালোচনা লিপিবদ্ধ করুন।

দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বইয়ের নাম উল্লেখ থাকে না। বিষয় অনুযায়ী যেকোনো বইয়ের সমালোচনা লেখার সুযোগ থাকে পরীক্ষার্থীদের। আর বইয়ের নাম উল্লেখ থাকলেও বহুল পরিচিত কোনো বই নিয়ে লিখতে হয়। ফলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। গ্রন্থ-সমালোচনা লেখার জন্য বইয়ের কাহিনি লিখতে হয় না। তাই ‘বইটি পড়া নেই’ ভেবে ভয় পাবেন না। জানা অল্প তথ্যকেও পদ্ধতিগতভাবে সাজিয়ে লিখে গ্রন্থ-সমালোচনার উত্তরে ভালো নম্বর তোলা যায়।

৪র্থ অনুচ্ছেদ: গ্রন্থের কাহিনি, চরিত্র ইত্যাদি নিয়ে লিখতে হবে। এ অংশের সফলতা নির্ভর করে গ্রন্থ-পাঠের ওপর। অনেক গ্রন্থের ভূমিকা পড়েও এ অংশ ভালো লেখা যায়। একটি গ্রন্থ সম্পর্কে যত তথ্য জানা যায়, তত সুন্দর করে এই অনুচ্ছেদ লেখা যায়। এ অংশের নির্দিষ্ট আয়তন নেই। যেমন: ‘একাত্তরের দিনগুলি’ সরাসরি পড়া থাকলে লেখা সহজ হয় এখানকার রুমী চরিত্রটি কেমন, তার কী ভূমিকা, গ্রন্থে আর কোন কোন চরিত্র আছে। গ্রন্থের কাহিনি, বিষয়, সংলাপ এগুলোও আলোচনায় আসবে।

৫ম অনুচ্ছেদ: সাহিত্যের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয় মানুষের জীবন, অনেক সময় লেখক সুনির্দিষ্টভাবে কোনো মতবাদের প্রয়োগ ঘটান। এর বাইরেও আরও অনেক রকম লক্ষ্য বা আঙ্গিক-বৈচিত্র্য থাকে। এর সঙ্গে আলোচ্য গ্রন্থকে সংশ্লিষ্ট করা গেলে করতে হবে। যেমন: মার্ক্সবাদ, প্রেমম-লক, কল্পকাহিনি, আঞ্চলিক কাহিনি, আত্মজীবনী ইত্যাদি।

৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদ: এ অংশে তুলনার কাজটি করতে হবে। যেমন: অনুরূপ বিষয় নিয়ে আর কোন কোন সাহিত্য রচিত হয়েছে, এর কিছু নমুনা দিতে হবে। একই গ্রন্থের কিংবা অন্য কোনো গ্রন্থের কোনো চরিত্রের সঙ্গে মেলানো যায় কি না, দেখতে হবে। আয়তন হতে পারে কমবেশি ৩ লাইন।

৭ম অনুচ্ছেদ: গ্রন্থের নামকরণের কারণ, বিষয় উপস্থাপনে বা চরিত্র সৃষ্টিতে লেখকের সফলতা-ব্যর্থতা বা কৌশল কিংবা অন্য যেকোনো ভালো-মন্দ দিকের মূল্যায়ন হবে এ অংশে। গ্রন্থের সম্ভাব্য নাম আর কী হতে পারত, কাহিনি অন্য কোন দিকে মোড় ঘোরানো যেত, চরিত্রের পরিণতির অন্য কোনো সুযোগ ছিল কি না, এ রকম বিষয় নিয়ে এ অংশে লিখবেন ৩-৪ লাইনে।

৮ম অনুচ্ছেদ: সবশেষে ১-২ বাক্যে উল্লেখ করবেন গ্রন্থটির গুরুত্ব কোথায়।

সতর্কতা

১. গ্রন্থের নামে ঊর্ধ্বকমা ব্যবহার করবেন।

২. একটি আকর্ষণীয় ও কাব্যিক শিরোনাম দেবেন।

৩. গ্রন্থ থেকে সরাসরি কোনো উদ্ধৃতি তুলে দেওয়ার দরকার হয় না।

৪. প্রয়োজনীয় গ্রন্থ সম্পর্কে দু-চারটি তথ্য আগে থেকে জেনে রাখার চেষ্টা করুন।

৫. সময়ের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখবেন।

৬. আয়তন হবে ২০-২৫ বাক্য।



ধন্যবাদ।