৪১তম বিসিএস কর ক্যাডার জনাব সাইফুল হকের বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি দিকনির্দেশনা | BCS Viva Preparation Complete Guidelines

৪১তম বিসিএস কর ক্যাডার জনাব সাইফুল হকের বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি দিকনির্দেশনা | BCS Viva Preparation Complete Guidelines
Admin

৪১তম বিসিএস  কর ক্যাডার জনাব সাইফুল হকের বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি দিকনির্দেশনা | BCS Viva Preparation Complete Guidelines


৪১তম বিসিএস  কর ক্যাডার জনাব সাইফুল হকের বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি দিকনির্দেশনা | BCS Viva Preparation Complete Guidelines
৪১তম বিসিএস  কর ক্যাডার জনাব সাইফুল হকের বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতি দিকনির্দেশনা | BCS Viva Preparation Complete Guidelines



বিসিএস ভাইভাতে কোন ধরাবাঁধা সিলেবাস নেই। তাই বোর্ড যেকোনো বিষয় থেকেই প্রশ্ন করতে পারে সেই মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। কিন্তু তাই বলে তো নিজের প্রস্তুতিতে ঘাটতি রাখা যাবে না। সম্ভাব্য যেসব দিক থেকে প্রশ্ন আসতে পারে সেসব ডিফেন্ড করার মত প্রস্তুতি নিয়েই ভাইভা ফেস করতে হবে। বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি মূলত ফার্স্ট চয়েজ কেন্দ্রিক হয়। আমার ফার্স্ট চয়েজ যেহেতু ফরেন এফেয়ার্স ছিল আমি যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম তা শেয়ার করছি- 

১। নিজ জেলা, উপজেলার বিস্তারিত ইতিহাস: 
এই সেগমেন্টে জেলা-উপজেলার নামকরণ, বিখ্যাত ব্যক্তি, ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ঐতিহাসিক ঘটনা, মুক্তিযুদ্ধের সাথে জেলার সম্পর্কিত ইতিহাস, জেলার খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের নাম, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের নাম, নিজ উপজেলার সংসদীয় আসন এবং নির্বাচনসমূহের ইতিহাস এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য, জেলা তথ্য বাতায়ন, অনলাইন নিউজ এসবের সাহায্য নিয়েছি। 

২। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ:
ভাইভাতে আপনি অন্য যেকোনো টপিকে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর না ই দিতে পারেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন না পারা মানে বিশাল ডিমেরিট। তাই এই সেগমেন্টের প্রস্তুতিতে সিরিয়াস হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরের জন্য প্রিলিম এবং রিটেনের প্রস্তুতিতেই ভাইভার প্রস্তুতি অনেকটাই হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানার জন্য তাঁর লিখিত তিনটি বইয়ের কোন বিকল্প নেই। তাই ভাইভা প্রস্তুতিতে সবার আগে এই তিনটি বই পড়ে শেষ করেছিলাম। এর বাইরে জানার জন্য আমি 'ক্র্যাক বিসিএস ভাইভা' এবং 'লেখক বিসিএস ভাইভা Must Read Questions' গাইডদুটি থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত অধ্যায়গুলো পড়েছি। তবে
এক্ষেত্রে শুধু গাইড বইয়ের উত্তরের উপর নির্ভর না করে গাইড বই থেকে প্রশ্ন নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন সোর্স থেকেও উত্তরগুলো ভেরিফাই করেছিলাম। 

৩। আন্তর্জাতিক ইস্যুজ:
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর প্রস্তুতির জন্য রিটেনের কনসেপচুয়াল অংশটা নাঈম স্যারের বেসিক ভিউ এবং নবাব স্যারের সলিড মেথড বই থেকে পড়েছিলাম। রিটেনের জ্ঞান ভাইভার প্রস্তুতি অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্সের পাঠ্য 'আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূলনীতি' এবং মোহাম্মদ মিরাজ মিয়ার 'এনাটমি অব ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স' বই দুটি পড়েছিলাম। এর বাইরে বিগত দুই বছরের সকল আন্তর্জাতিক আলোচ্য ঘটনাসমূহ টপিক ভিত্তিক নোট করে অনলাইনে বিভিন্ন নিউজ, কলাম এসব সার্চ দিয়ে পড়েছি। যেসব তথ্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে নোট করেছি। প্রতিদিন অনলাইনে প্রথম আলো, যুগান্তর, বণিকবার্তা আর ডেইলি স্টারের আন্তর্জাতিক পাতা এবং সম্পাদকীয় অংশের বৈশ্বিক সংকট সম্পর্কিত কলাম গুলো পড়েছি। ভাইভার প্রস্তুতির জন্য দৈনিক পত্রিকা পড়া অপরিহার্য। যারা ৪৩ তম বিসিএসে ফরেন এফেয়ার্সের ভাইভা দিবেন তারা অবশ্যই প্রতিদিন (thediplomat . com) এর কলামগুলো পড়বেন। এটি আপনার আন্তজার্তিক ঘটনাবলী ব্যাখ্যা করার সামর্থ্য বাড়াবে। 

৪। জাতীয় অর্জন:
এই সেগমেন্ট এর প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল (albd . org) ওয়েবসাইটটি রেগুলার ফলো করেছি। বর্তমান সরকারের যাবতীয় অর্জন এবং সাফল্য এখানে পাবেন। ভাইভা প্রার্থীদের জন্য এটি এক অমূল্য তথ্যভান্ডার। এছাড়াও দৈনিক বিভিন্ন পত্রিকার প্রথম পাতা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি পাতাগুলো পড়েছি। যেসব তথ্য গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে নোট করেছি। যেমন বিভিন্ন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রস্তাবগুলো, মেগা প্রজেক্ট, কূটনৈতিক অর্জন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি, MoU ইত্যাদি বিষয় সংক্ষেপে নোট করেছি। 

৫। সংবিধান ও আইন:
বিসিএস ভাইভায় সংবিধান না পড়ে যাওয়া রীতিমত অপরাধের শামিল। তাই সংবিধানের উপর জোর প্রস্তুতি নিয়েছি। এক্ষেত্রে প্রিলিম এবং রিটেনের পড়া অনেকেটাই এগিয়ে রেখেছিল। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আইনসমূহ যেমন CrPC, PRB, Penal Code এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা যেগুলো ভাইভা বোর্ডে সাধারণত প্রশ্ন করা হয় সেগুলো নোট করে মুখস্থ করেছিলাম। এগুলোর জন্য প্লেস্টোরে বাংলা অনুবাদকৃত এপ পাবেন। আবার আইন মন্ত্রণালয় এর ওয়েবসাইটেও সবগুলো আইন পাওয়া যাবে।  

৬। নিজের সাবজেক্ট: 
ভাইভাতে নিজের সাবজেক্ট থেকে কোন প্রশ্নে আপনি আটকাবেন না এমনটাই আশা করে বোর্ড। তাই নিজের সাবজেক্ট থেকে যেসব প্রশ্ন আসতে পারে সেসবের উপর ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার সাবজেক্ট ফরেস্ট্রি। সাবজেক্ট ভিত্তিক প্রস্তুতি যার যার আলাদা তাই এখানে আর বিস্তারিত লিখছি না। 

৭। বিবিধ বিষয়:
এই সেগমেন্টে আমি সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, মন্ত্রণালয় সমূহ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহ, জাতীয় বিভিন্ন নীতিমালা ইত্যাদি বিষয়ে অনলাইনে বিভিন্ন সোর্স থেকে পড়েছি। এছাড়াও ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত কিছু কবিতা, গান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা দুটি কবিতা ইত্যাদি মুখস্ত করেছিলাম। সাহিত্য সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য কিছু বাংলা উপন্যাসও পড়েছিলাম। 

মোটা দাগে এই ছিল আমার ভাইভার প্রস্তুতি। এসবের বাইরেও ভাইভার আগে দুটি ভাইভা গাইড একবার রিডিং দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এটা করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলাম কারণ এতে পুরো ভাইভার প্রস্তুতি একবার রিক্যাপ করা হয়ে যায়। এছাড়াও গাইড বইগুলোতে প্রচুর রিয়েল ভাইভার প্রশ্নোত্তর থাকে যেগুলো কনশাসলি আপনার প্রস্তুতিতে নাও আসতে পারে। 

কিছু সাজেশন- 
১। অবশ্যই নোট করে পড়তে হবে। তবে নোট করতে হবে স্মার্টলি। খাতায় নোট করে সময় নষ্ট করবেন না। আমি অনলাইনে পড়ে গুগল ডকে নোট করেছি সবকিছু। আপনারাও এটা ফলো করতে পারেন। এতে সময় বাঁচে এবং যখন ইচ্ছা তখনই নোটগুলো পড়তে পারবেন। 

২। আপনার প্রস্তুতিতে আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগান। কিছু কমন প্রশ্ন যেমন Introduce yourself, Speech for attracting FDI, Speech before foreign delegates representing your country, Speech for letter of credence ইত্যাদির জন্য বাজারের গাইড বইয়ের উত্তর মুখস্ত না করে নিজের মত উত্তর বানিয়ে নিন। এক্ষেত্রে ChatGPT হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আমি এসব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেই নিজের মত কাস্টমাইজ করে নিয়েছিলাম। 

৩। আপনার ভাইভা ইংরেজি/বাংলা যেকোন ভাষায় হতে পারে।  তাই ইংরেজি এবং বাংলা দুই ভাষাতেই ফ্লুয়েন্টলি কথা বলার প্র্যাকটিস করুন। বাংলা ভাষায় আঞ্চলিকতা পরিহার করে স্পষ্ট প্রমিত বাংলায় কথা বলার প্র্যাকটিস করুন। ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্সি বাড়ানোর জন্য ইংরেজি পড়ার কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন ইংরেজি নিউজ, আর্টিকেল ইত্যাদি পড়ুন। মনে মনে না পড়ে হালকা সাউন্ড করে রিডিং পড়বেন যেন আপনার ঠোঁট, জিহবা ইত্যাদি বাগযন্ত্রগুলো নড়াচড়া করে। এতে মুখের জড়তা দূর হবে। 

এগুলো ছিল আমার সচেতন প্রস্তুতি। এর বাইরেও অনেক অবচেতন প্রস্তুতি থাকে যেটা লিখায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। আমি কোন ভাইভা এক্সপার্ট না। শুধু নিজে যে রাস্তায় হেটে সফলতা পেয়েছি সেই রাস্তাটা চেনানোর চেষ্টা করলাম। যার যার স্বতন্ত্র প্রস্তুতির ধরণ থাকতেই পারে। 

সবার জন্য শুভকামনা 

মো: সাইফুল হক
সহকারী কর কমিশনার (সুপারিশপ্রাপ্ত)
বিসিএস (কর) ক্যাডার
৪১তম বিসিএস